সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ : আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন বিষয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মহল। দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘটছে নানা ঘটনা এ ছাড়া দফায় দফায় রাজধানীতে প্রকাশ্যে চলছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর মিছিল।
সকল বিষয় বিবেচনায় রাজনৈতিক মহলে স্থবিরতা লক্ষ্য করা গেলে ও হঠাৎ গতকাল সারাদেশের প্রতিটি আসনের ন্যায় নারায়ণগঞ্জের তিনটি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নিধারনের মধ্যে দিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এদিকে বর্তমানে কিছু কিছু আসনের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে নির্বাচন কমিশনারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালে ও অন্যদিকে অনেকেই আসন পুনর্বিন্যাসে মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছেন।
এদিকে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের পুনর্বিন্যাসকে এই আসনের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সমর্থন করলে ও সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকার বাসিন্দা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ। এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ (সদর-ফতুল্লা) আসনে পুনবিন্যাসে বর্তমাসে কপাল চিন্তার ভাঁজ পরেছে মামুন মাহমুদ শিবিরে।
দিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন এলাকায় বেশ আলোচনায় ছিলেন অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী এলাকায় বেশ সরব ছিলেন তিনি। প্রতিনিয়তই তিনি নির্বাচনী প্রচারণামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে জনসাধারণের মাঝে হাজির হয়েছেন। নিজের অবস্থান জানান দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের পুনর্বিন্যাসে মামুন মাহমুদের আসন নিয়ে দু টানার মধ্যে পড়ে যেতে হচ্ছে।
তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) এলাকাকে কেন্দ্র সরব থাকলেও আসন পুনর্বিন্যাসে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ ভাগ হয়ে দুই আসনে চলে গেছে। ফলে মামুন মাহমুদের জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতার শিকার হতে হচ্ছে। তা ছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁ আসনের মাধ্যমে সোনারগাঁও এলাকায় তার কোনো বিশেষ পরিচিতি নেই। সেই এলাকায় তিনি টুকটাক লোকের কাছে কলেজ মাস্টার হিসেবে পরিচিত এর বাহিরে আর কিছু নেই। সেদিকে আলহাজ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন সিদ্ধিরগঞ্জের বাসিন্দা হলে ও সোনারগাঁও ৩০ লাখ ৭০ হাজারের ভোটের থানা এলাকায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।
অন্যদিকে ৭টি ইউনিয়নকে নিয়ে ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন গঠিত হওয়ায় সেখানে কোনোভাবেই গ্রহণ যোগ্যতা নেই মামুন মাহমুদের। সেখানকার মানুষ ও মামুন মাহমুদকের সাথে কোনোভাবেই পরিচিতি নেই। একইভাবে ফতুল্লা-সোনারগাঁও কোন জায়গায় ভোটারদের সাথে সুসম্পর্ক নেই মামুন মাহমুদের। যাকে ঘিরে এবার কোন আসন টার্গেট মামুন মাহমুদের তা নিয়ে আলোচনা উঠছে।
এদিকে গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন নারায়ণগঞ্জের তিনটি আসন পুনর্বিন্যাসের ঘোষণা দিয়েছেন। যার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনে এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা। এরপর থেকেই মাথায় চিন্তার ভাঁজ রয়েছে মামুন মাহমুদের। তিনি কোনোভাবেই মেনে নিচ্ছেন না নির্বাচন কমিশনারের এই পুনর্বিন্যাস। এর আগে সিদ্ধিরগঞ্জ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে। স্বাধীনতার পর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন।
২০০৮ সালের নির্বাচনে সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন গঠন করা হয়। তবে পরের ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ ছিল শুধু মাত্র সোনারগাঁও নিয়ে। নএদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন শুধু মাত্র ফতুল্লা থানা ও সদর থানার দুটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয়েছে। এতে ফতুল্লা, এনায়েতনগর, বক্তাবলী, কাশীপুর, কুতুবপুর গোগনগর ও আলীরটেক। এই অবস্থায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহমুদকে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হতে পারে। বর্তমানে হতাশায় ভুগছেন মামুন মাহমুদ। যাকে ঘিরে এবার নতুন করে তাকে সোনারগাঁ এলাকাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। যা মামুন মাহমুদের জন্য একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা বলা চলে।
সূত্র বলছে, গত ১৭ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। আর এই ক্ষমতায় থাকাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। দিনের পর দিন মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে পরিবার পরিজন ছেড়ে দিন যাপন করতে হয়েছে বনবাসে। সেই সাথে অনেক সময় তারা আন্দোলন সংগ্রামেও অংশ নিতে পারতেন না। ব্যবসা বাণিজ্যে নানাভাবেই বাধার শিকার হয়েছেন। সব মিলিয়ে তাদের যেন স্বাভাবিক জীবনযাপন ছিল না। এ ছাড়া যখনই নির্বাচন আসতো সে সময় বিএনপি যেন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেই জন্য তাদের উপরে দেওয়া হতো মামলার খড়্গ। এদিকে গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয় । আর এই পতনের সাথে সাথেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। এই অবস্থায় একদম খালি মাঠে রয়েছে বিএনপি। যে কারণে তারা বুঝেছিলেন তাদের নিয়ন্ত্রণেই হতে পারে নির্বাচন। কিন্তু সকল কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন কমিশনার এক কায়দায় খসড়া দিয়ে আরেক কায়দায় তা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছেন। তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তা ছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যদি ফতুল্লা থানার সাথে একত্রিত না থাকে তাহলে কোনোভাবেই মামুন মাহমুদ ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে নির্বাচন করবে বলে জানা গিয়েছে। এমতাঅবস্থায় দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর আবারও আলোচনায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সাবেক নেতা মো. শাহ আলম। সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস যেন তার রাজনৈতিক জীবনে নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। স্থানীয় রাজনীতিতে এখন প্রশ্ন এই সুযোগকে কি তিনি এমপি হওয়ার টিকিটে রূপ দিতে পারবেন?
নতুন সীমানা অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে এখন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ফতুল্লা, এনায়েতনগর, বক্তাবলী, কাশীপুর, কুতুবপুর, গোপনগর ও আলীরটেক ইউনিয়ন। অন্যদিকে, সিদ্ধিরগঞ্জকে এই আসন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে। এতে করে শাহ আলমের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বদ্বী প্রার্থী হিসেবে পরিচিত মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও মামুন মাহমুদ আর থাকছেন না এই আসনের খেলায়। ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে শাহ আলমের সম্ভাবনা আগের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। এদিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হওয়ার পর ফতুল্লা বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে মামুন মাহমুদের ঘনিষ্ঠ থাকলে ও সাধারণ জনগণের সাথ নেই তার কোন সম্পর্ক। তা ছাড়া বিগত দিনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের মানুষ দুইজনকেই চিনতেন তারা হলেন মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও আলহাজ¦ শাহ-আলম। এর বাহিরে কাউকেই চিনেন না তারা। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে সদস্য নবায়ন কর্মসূচি এবং ব্যানার-ফেস্টুনের মাধ্যমে মামুন মাহমুদকে কিছু জনগণ চিনলে ও মূল ভোটাররা তাকে কেউ চিনেন না। এমতা অবস্থায় তিনি এই মাঠে নতুন। একইভাবে সিদ্ধিরগঞ্জে তার আধিপত্য ও লোকবল ধরে রাখতে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করলে ও সেখানে নেই তার কোন গ্রহণযোগ্যতা বা পরিচিতি। যাকে ঘিরে সেই আসনে তিনি পুরোপুরি নতুন। যাকে ঘিরে নতুন ভোটারদের মুখোমুখি হতে হবে এই নেতার। যাকে ঘিরে বর্তমানে নেতাকর্মীদের মুখে মুখে আলোচনা উঠছে এবার কোন আসন টার্গেট মামুন মাহমুদের।
আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী অধ্যাপক মামুন মাহমুদ যুগের চিন্তাকে বলেন, আজকে নির্বাচন কমিশনার যে সীমানা পূর্ণবিন্যাসের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে সেটা কিন্তু এর আগে যে খসড়া প্রস্তাব করা হলো সেখানে এভাবে সাজানো ছিলো না। আর বর্তমানে যে সীমানা পূর্ণবিন্যাস হয়েছে সেখানে সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সিদ্ধিরগঞ্জের মানুষ শীতলক্ষ্যা নদী পাড় হয়ে ওই পাড়ে যেতে আগ্রহী নয়। এখনো আমরা গেজেট হাতে পাইনি সেটা হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available