• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ২১শে অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বিকাল ০৫:৪২:৪০ (05-Dec-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

সস্ত্রীক বিদেশ ভ্রমণে চেয়ারম্যান রুহুল আমিনসহ মন্ত্রণালয়ের ৩ কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএডিসি) সার আমদানির নামে চলছে দুর্নীতির মহাৎসব। বিএডিসি পরিণত হয়েছে দুর্নীতির অভয়ারণ্যে। জি-টু-জি (সরকার টু সরকার) চুক্তির মাধ্যমে সার আমদানির সরকারি নির্দেশনা থাকলেও, তা লঙ্ঘন করে বিদেশি বেসরকারি ট্রেডিং কোম্পানির মাধ্যমে নিম্নমানের ও ভেজাল সার আমদানির, রাষ্ট্রবিরোধী চুক্তিসহ নানা অভিযোগও রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।এছাড়া নিম্নমানের ও ভেজাল সার আমদানির করে লেটার অফ ক্রেডিটের (এলসি) মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। বিদেশে পাচার সেই টাকা গ্রহণের জন্য সস্ত্রীক বিদেশ ভ্রমণে গেছেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন খানসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।জানা গেছে, বিগত ২০১৪ সাল থেকেই কানাডা থেকে জি-টু-জি (সরকার টু সরকার) চুক্তির মাধ্যমে পটাশ সার আমদানি করছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। শুরু থেকেই সার আমদানির ক্ষেত্রে ৫% হারে মূল্য ছাড় পেয়ে আসছিল বিএডিসি। এই মূল্যছাড় সার আমদানির পরিমাণের উপর নির্ভরশীল ছিল না। কিন্তু চলতি বছর কৃষি মন্ত্রণালয় সমঝোতার নামে কানাডার সাথে নতুন করে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে বিএডিসি।  নতুন চুক্তি করার কারণে সার আমদানি খাতে রেসিপ্রকাল ট্যারিফের মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কানাডা থেকে সার কম আমদানি করলে কম ডিসকাউন্ট এবং বেশি আমদানি করলে বেশি ডিসকাউন্টের শর্ত চুক্তিপত্রে যোগ করা হয়েছে। বিগত ২০১৪ সাল হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কানাডা থেকে জিটুজির মাধ্যমে যে পরিমাণই সার আমদানি করা হতো সেই আমদানিকৃত সারের পরিমাণ থেকে ৫% মূল্য ছাড় পেতো বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। ২০১৪ হতে ২০২৩ পর্যন্ত প্রতিবছর বিএডিসি ২ লাখ মেট্রিক টন করে সার কানাডা হতে আমদানি করত একই মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিতে ৫% করে মূল্যে ছাড় পেয়ে আসছিল। কিন্তু বর্তমান চুক্তিতে ৫% মূল্য ছাড় পেতে হলে ন্যূনতম ৫ লাখ মেট্রিক টন সার আমদানি করতে হবে।একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন খান বিএডিসিতে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নিজের আখের গোছানোর জন্য নানা ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। বিএডিসির সার আমদানির জন্য নিজেদের ভাড়াকৃত জাহাজে অন্য দেশ অথবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সার আমদানি করার কো-শীপমেন্ট নিয়ম চালু করেছে। গত ২৯ এপ্রিল কানাডিয়ান কমার্শিয়াল কর্পোরেশনকে (সিসিসি) আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রকার ভেটিং এবং মতামত ছাড়াই কো-শীপমেন্ট চুক্তি অন লাইনে মাধ্যমে সম্পাদন করেছেন।দেশ বিরোধী ও বেআইনিভাবে সম্পাদন করা কো-শীপমেন্ট চুক্তির ফলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের নিজস্ব টাকায় অন্য দেশ অথবা অন্য প্রতিষ্ঠান অথবা অন্য বিনে পয়সায় বিদেশ থেকে সার আমদানি করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়ে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণের পথ সুগম করে নিয়েছে। কো-শীপমেন্ট চুক্তির পর গত জুলাই মাসে কানাডা থেকে আমদানিকৃত প্রথম লটের সারবাহী জাহাজ এমভি জেনকো মেরীতে ইন্দোনেশিয়ার একটি বেসরকারি কোম্পানীর কানাডা থেকে আমদানি ইন্দোনেশিয়ার জন্য সার বাংলাদেশের ভাড়াকৃত জাহাজে করে এনে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন সার সুমাত্রায় খালাস করে অবশিষ্ট বাংলাদেশের সার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে।সুমাত্রায় খালাসকৃত ২০ হাজার মেট্রিক টন সার বহনের ভাড়ার টাকা কারা গ্রহণ করেছে। এছাড়া একই ভাবে গত সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিতীয় লটে কানাডা থেকে বিএডিসির ভাড়াকৃত জাহাজে ভারতে ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার খালাস করে অবশিষ্ট সার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। সূত্রটি জানায় কানাডিয়ান কমার্শিয়াল কর্পোরেশন (সিসিসি) থেকে মোটা অংকের উৎকোচের গ্রহণ করে কো-শীপমেন্ট কাজের পুরো সুবিধা কানাডার সার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে। এদিকে নির্ধারিত সময়ের আগে জাহাজ থেকে সার খালাস করলে জাহাজ মালিককে বিএডিসি থেকে একটি বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হতো এবং বিলম্বে সার খালাস করলে বিএডিসিকে জরিমানা প্রদানের জন্য ফিক্সড ৬ হাজার থেকে ১২ হাজার ডলার প্রদান করা হতো। কিন্তু বর্তমানে দেশ বিরোধী এই চুক্তির কারণে সারের বাজার মূল্য অনুসারে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার ডলার প্রদান করতে হবে।সূত্রটি আরো জানায়, কানাডিয়ান কমার্শিয়াল কর্পোরেশন (সিসিসি) সাথে চুক্তি করার পর নিজেদের উৎকোচের টাকা গ্রহণের জন্য কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন খানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ৭ নভেম্বর সস্ত্রীক কানাডায় সফরে গেছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের সস্ত্রীক বিদেশ সফরের জন্য সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন হলেও বিএডিসির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে যাওয়া এই দলের কেউই অনুমতি নেয়নি।ছাড়া সফর সঙ্গী হিসেবে সরকারি আদেশে নিজের পরিচয় গোপন করে গিয়েছেন কৃষি উপদেষ্টার একান্ত সচিব কাজী হাফিজুল আমিন, বিএডিসির সদস্য পরিচালক মো. মজিবুররহমান ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মনিরুজ্জামান।বিএডিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, রাষ্ট্রবিরোধী চুক্তি করে নিজেদের উৎকোচের টাকা গ্রহণ করতে নিজেদের বেগমদেরকে নিয়ে কানাডার বেগমপাড়া ভ্রমণ করে তারা আগামী ২১ নভেম্বর দেশে ফিরবেন।ওই কর্মকর্তা আরও জানান, কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন খানের চাকরির মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তিনি দেশের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের আখের গোছাচ্ছেন। তার দুরদর্শীতার অভাবে দেশে এবার সারের মহাসংকট সৃষ্টি হয়েছে।এর আগে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন খান তার স্ত্রী ফারাহ সাগরিকাকে নিয়ে কোনো প্রকার সরকারি অনুমতি ছাড়াই চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সৌদি আরব, ফেব্রুয়ারি মাসে চায়না, জুলাই মাসে মালয়েশিয়া এবং আগস্ট মাসে মরক্কো সফর করেছেন।এ সব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন খানকে মোবাইলে কল করা হলে তিনি ধরেননি। পরে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার সাড়া পাওয়া যায়নি।