আন্তর্জাতিক ডেস্ক: একসময় কাজের খোঁজে ভারতে আসা বহু নেপালি এখন দ্রুত সীমান্ত পেরিয়ে ফিরে যাচ্ছেন স্বদেশে। দেশটি গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিরতার মুখোমুখি।
একজন নেপালি নাগরিক বলেন, আমরা আমাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাচ্ছি, আমরা বিভ্রান্ত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের ঘটনায় সৃষ্ট সহিংসতায় পর নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেন। যদিও পরে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়, তবে জেনারেশন জেড নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ থেমে থাকেনি। দেশজুড়ে কারফিউ জারি রয়েছে, রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, পার্লামেন্ট ভবন ও রাজনীতিকদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওলির পদত্যাগের পর দেশটি এখন কার্যত সরকারহীন।
এমন পরিস্থিতিতে অভিবাসী শ্রমিক সারোজ নেভারবানি বলেন, বাড়িতে সমস্যা চলছে, তাই ফিরতেই হবে। আমার বাবা-মা ওখানে আছেন, পরিস্থিতি খুব খারাপ।
পেসাল ও লক্ষ্মণ ভাট নামের দুইজন বলেন, আমরা কিছুই জানি না, শুধু জানি বাড়ি ফিরে যেতে হবে।
তাদের অনেকের ফেরার পেছনে শুধু রোজগার বা চাকরির প্রশ্ন নেই, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে পরিবার, নিরাপত্তাহীনতা, আর সেই অভিবাসনের চক্র, যা বহু প্রজন্ম ধরে নেপালিদের জীবনের অংশ।
ভারতে অবস্থানরত নেপালিদের তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:
প্রথমত, ঋতুভিত্তিক বা মৌসুমি শ্রমিক। যারা পরিবারের সদস্যদের নেপালে রেখে ভারতে কাজ করতে আসেন: রাঁধুনি, গৃহকর্মী, নিরাপত্তারক্ষী বা স্বল্প মজুরির শ্রমিক হিসেবে। তারা নেপালের নাগরিকই থাকেন, ভারতের আধার কার্ড পান না এবং প্রায়ই স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেবা থেকে বঞ্চিত হন।
দ্বিতীয়ত, পরিবারসহ স্থানান্তরিত। তারা ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন, পরিচয়পত্র পান, জীবন গড়ে তোলেন, তবুও নেপালি নাগরিকত্ব রাখেন এবং দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন। এমনকি ভোট দিতেও ফিরে যান।
তৃতীয়ত, ভারতীয় নাগরিক নেপালি বংশোদ্ভূতরা। ১৮শ থেকে ২০শ শতকের অভিবাসনের ধারায় যারা ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তারা ভারতীয় হলেও সাংস্কৃতিকভাবে নেপালের সঙ্গে আত্মীয়তা অনুভব করেন।
ভারতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যেও নেপালিদের সংখ্যাই সর্বাধিক, সর্বশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৪৭ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৩ হাজারের বেশি নেপালি।
তাছাড়া, প্রায় ১ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ খোলা সীমান্ত ও ১৯৫০ সালের শান্তি ও মৈত্রীর চুক্তির সুবাদে বহু নেপালি ভারতে আসেন চিকিৎসা, কেনাকাটা বা আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে।
কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেশব বাশ্যাল জানান, নতুন নেপালি শ্রমিকদের বেশিরভাগের বয়স ১৫-২০ বছরের মধ্যে হলেও গড় বয়স ৩৫ বছর। বেকারত্ব ও বৈষম্যই এই অভিবাসনের মূল চালিকাশক্তি, বিশেষ করে দরিদ্র, গ্রামীণ ও কম শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে, যাদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ এমনিতেই কম।
তিনি বলেন, তাদের বেশিরভাগ কাজ করেন নির্মাণক্ষেত্রে, উত্তরাখণ্ডের ধর্মীয় স্থানে, পাঞ্জাবের কৃষিক্ষেতে, গুজরাটের কারখানায় এবং দিল্লি ও অন্যান্য শহরের হোটেল-রেস্তোরাঁয়।
এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক রাজনৈতিক নৃতত্ত্ববিদ জীবন শর্মা বলেন, খোলা সীমান্তের কারণে ভারতে কতজন নেপালি নাগরিক কাজ বা বসবাস করছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন, তবে অনুমান করা হয় এই সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ লাখের মধ্যে। সূত্র: বিবিসি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available